সংগঠন হলো প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত মানবীয় ও বস্তুগত উপকরণাদিকে সংহত ও সঠিকভাবে কাজে লাগানোর একটি প্রক্রিয়া। L. A. Allen বলেছেন, 'সংগঠন হলো একটি প্রক্রিয়া যা উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য আবশ্যকীয় কার্যাদি শনাক্তকরণ ও শ্রেণিবদ্ধকরণ, দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব সংজ্ঞায়িতকরণ ও বণ্টন এবং কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের সাথে সম্পর্কিত।” উপরোক্ত সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে সংগঠন প্রক্রিয়ার যে সকল পদক্ষেপ লক্ষণীয় তা নিম্নে রেখাচিত্রের সাহায্যে তুলে ধরা হলো :
ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. কার্য বিভাজন বা বিভাগীয়করণ (Departmentation of jobs) : ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার প্রথম কাজ বা পদক্ষেপ হলো কার্যাদি সঠিকভাবে শনাক্ত বা নির্দিষ্ট করে তা প্রকৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা । কাজ সঠিকভাবে চিহ্নিত ও ভাগ করা না হলে উপযুক্ত কর্মীসংস্থান ও দায়িত্ব অর্পণ সম্ভব হয় না । ধরা যাক, সজীবকে একটি ক্লাব সংগঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে । তাহলে সজীবের প্রথম কাজ হবে ক্লাবের উদ্দেশ্য বুঝে কী কী কাজ করতে হবে তা নির্দিষ্টপূর্বক কাজগুলোকে প্রধান প্রধান কতকগুলো ভাগে ভাগ করা; যেমন -অফিস বিভাগ, ক্রীড়া বিভাগ, সংস্কৃতি বিভাগ ইত্যাদি ।
২. দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব সংজ্ঞায়িতকরণ (Defining authority and responsibility) : কাজ ভাগ করার পর সংগঠন প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো প্রত্যেক কাজের জন্য দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের সীমারেখা নির্দিষ্ট করা । উৎপাদন বিভাগ এবং ক্রয় বিভাগ পাশাপাশি থাকলে যদি প্রত্যেক বিভাগের দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব ঠিক করে দেয়া না হয়, কোন মালামাল কোন বিভাগ ক্রয় করবে এ বিষয়ে যদি সুস্পষ্ট কর্তৃত্ব ভাগ না থাকে তবে কার্যক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়া স্বাভাবিক । প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব নির্দিষ্ট থাকলে সে অনুযায়ী প্রত্যেককে জবাবদিহি করা সহজ হয় । ফলে ফাঁকিবাজী, অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো ইত্যাদির সুযোগ থাকে না ।
৩. দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব অর্পণ (Delegation of authority and responsibility) : দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের সীমারেখা নিরূপণের পর সংগঠন প্রক্রিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ হলো প্রত্যেক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, বিভাগ বা উপবিভাগকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব বুঝিয়ে দেয়া । এক্ষেত্রে দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব সব সময়ই সমান হওয়া উচিত । প্রত্যেক ব্যক্তি, বিভাগ ও উপবিভাগের দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব যথাযথভাবে বুঝিয়ে দেয়া হলে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায় । সেই সাথে প্রত্যেকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব বুঝে নিয়ে সে অনুযায়ী কাজ করতে সচেষ্ট হয়। ফলে কার্যক্ষেত্রে দক্ষতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধি পায় ।
৪. পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ (Determining interpersonal relation) : সংগঠন প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপ হলো প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগ, উপবিভাগ ও ব্যক্তির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করা। এক্ষেত্রে কে কার ঊর্ধ্বতন এবং কে কার অধস্তন তা ঠিক করা হয় । কে কার নিকট থেকে নির্দেশ লাভ করবে ও কার নিকট জবাবদিহি করবে তা বলে দেয়া হয় । তবে এক্ষেত্রে যাতে কখনই দ্বৈত অধীনতার সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন ।
উপরোক্ত পদক্ষেপসমূহ ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করে কার্যকর সংগঠন গড়ে তোলা হয় । সংগঠন কাঠামো মজবুত ও শক্তিশালী হলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও উপায়-উপকরণের কার্যকর ব্যবহার সম্ভব হয়ে থাকে ।